মাইগ্রেনকে সাধারণত মাথাব্যথা ভেবে এড়িয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু এটি শুধুমাত্র মাথাব্যথা নয়, বরং একটি জটিল স্নায়বিক সমস্যা। বিশ্বজুড়ে কোটি মানুষ এই ব্যাধিতে ভোগেন, এবং আক্রান্তদের জীবনের মানকে মারাত্মকভাবে নষ্ট করে দেয়।
মাইগ্রেন: নীরব যন্ত্রণা, যা বদলে দিতে পারে আপনার জীবন





মাইগ্রেন কী?
মাইগ্রেন হলো পুনরাবৃত্ত মাথাব্যথা, যা সাধারণত মাথার একপাশে হয়। এর সঙ্গে থাকে নানা উপসর্গ—
-
মাথা ঘোরা
-
আলো ও শব্দে অতিসংবেদনশীলতা
-
ঝাপসা দেখা
-
বমি বা বমিভাব
-
ক্লান্তি ও মনোযোগের ঘাটতি
কেন হয় মাইগ্রেন?
মাইগ্রেনের সঠিক কারণ এখনো পুরোপুরি জানা যায়নি। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মস্তিষ্কের রাসায়নিক পরিবর্তন ও স্নায়ুর অস্বাভাবিক কার্যক্রম এটির জন্য দায়ী।
-
মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা
-
পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব
-
হরমোনজনিত পরিবর্তন
-
অতিরিক্ত ক্যাফেইন বা চকলেট জাতীয় খাবার
-
মোবাইল/কম্পিউটার স্ক্রিনে দীর্ঘক্ষণ কাজ
এসব কারণে মাইগ্রেন বেড়ে যেতে পারে।
কারা বেশি আক্রান্ত হন?
-
নারীরা পুরুষদের তুলনায় প্রায় তিন গুণ বেশি মাইগ্রেনে ভোগেন।
-
পরিবারে কারও মাইগ্রেন থাকলে উত্তরাধিকার সূত্রেও হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
-
কর্মজীবী মানুষ, বিশেষ করে যারা দীর্ঘ সময় চাপের মধ্যে থাকেন, তাদের মধ্যে এর প্রকোপ বেশি।
মাইগ্রেন হলে কী করবেন?
-
পর্যাপ্ত ও নিয়মিত ঘুমান।
-
নির্দিষ্ট সময়ে খাবার খান, বেশি সময় না খেয়ে থাকবেন না।
-
তীব্র আলো, শব্দ ও গন্ধ থেকে দূরে থাকুন।
-
প্রচুর পানি পান করুন।
-
স্ট্রেস ম্যানেজ করতে মেডিটেশন বা হালকা ব্যায়াম করুন।
-
চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া দীর্ঘমেয়াদে ওষুধ খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
কী করবেন না?
-
ক্যাফেইন, ধূমপান ও মদ্যপান এড়িয়ে চলুন।
-
অতিরিক্ত জাঙ্ক ফুড খাবেন না।
-
প্রয়োজনের বেশি সময় স্ক্রিনে চোখ রাখবেন না।
-
ব্যথার সময় জোরে শব্দ বা উজ্জ্বল আলোতে থাকবেন না।
পরিবার ও সমাজের দায়িত্ব
মাইগ্রেন রোগীরা শারীরিক ও মানসিকভাবে ভীষণ কষ্ট পান। তাই তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া জরুরি।
-
রোগীর কষ্টকে অবহেলা করবেন না।
-
"অভ্যাস" বা "অজুহাত" ভেবে মাইগ্রেনকে হালকা করে দেখবেন না।
-
প্রয়োজন হলে রোগীকে বিশ্রামের সুযোগ দিন।
-
নিয়মিত চিকিৎসা নিতে উৎসাহিত করুন।
উপসংহার
মাইগ্রেন এমন এক ব্যাধি, যা অবহেলা করলে জীবনের মান নষ্ট করে দেয়। সচেতনতা, নিয়মিত জীবনযাপন ও সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে এ সমস্যাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। মাইগ্রেন রোগীদের প্রতি সমাজ ও পরিবারের সহানুভূতি এবং সমর্থন সবচেয়ে বড় শক্তি হয়ে দাঁড়াতে পারে।