বিশ্ববাজারে সোনার দাম ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। মার্কিন ডলারের দুর্বলতা এবং যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ শিগগিরই সুদহার কমাবে—এমন প্রত্যাশা বিনিয়োগকারীদের সোনার দিকে আকৃষ্ট করেছে। এর ফলেই পণ্যের দাম বেড়ে নতুন রেকর্ড গড়েছে।
বিশ্ববাজারে সোনার দাম রেকর্ড উচ্চতায়





গত মঙ্গলবার আউন্সপ্রতি সোনার দাম বেড়ে ৩ হাজার ৫০৮ দশমিক ৫০ মার্কিন ডলারে ওঠে। বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দাম বেড়েছে ৩০ শতাংশেরও বেশি। বিশ্লেষকেরা বলছেন, চলতি বছর শেষ হওয়ার আগেই সোনার দাম আউন্সপ্রতি ৩ হাজার ৬০০ ডলার ছাড়াতে পারে।
আর্থিক বাজার বিশ্লেষক কাইল রড্ডা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক দুর্বলতা এবং ফেডের স্বাধীনতায় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হস্তক্ষেপ ডলারভিত্তিক সম্পদের প্রতি আস্থা কমিয়েছে। ফলে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ সম্পদ হিসেবে সোনার দিকে ঝুঁকছেন।
বাজার পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরের ১৭ তারিখে ফেড অন্তত এক-চতুর্থাংশ শতাংশ পয়েন্ট সুদহার কমাতে পারে। অর্থনীতিবিদেরা মনে করেন, সুদহার কম থাকলে সোনার মতো সুদবিহীন সম্পদ আরও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে, তাই দাম বাড়তে থাকবে। বর্তমানে ডলারের দাম প্রতিদ্বন্দ্বী মুদ্রাগুলোর বিপরীতে দেড় মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে চলে এসেছে, এতে বিদেশি ক্রেতাদের জন্য সোনা তুলনামূলক সস্তা হয়েছে।
২০২৪ সালে সোনার দাম বেড়েছে ২৭ শতাংশ। গত মার্চে ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতি নিয়ে অনিশ্চয়তা শুরু হলে সোনার দাম প্রথমবারের মতো ৩ হাজার ডলার অতিক্রম করে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, যদি ফেড আরও একাধিকবার সুদহার কমায় এবং রাশিয়া–ইউক্রেন সংকট দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে সোনার দামের ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত থাকবে।
কেন সোনার দাম ওঠানামা করে
সোনার দাম মূলত সরবরাহ ও চাহিদার ওপর নির্ভরশীল। সরবরাহ আসে নতুন খনি থেকে উত্তোলন ও পুরোনো সোনা বিক্রির মাধ্যমে। দাম বাড়লে অনেকেই হাতে থাকা সোনা বিক্রি করে দেন। অন্যদিকে চাহিদা তৈরি হয় গয়না ও বিনিয়োগের কারণে। আন্তর্জাতিক গোল্ড কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী, সরবরাহকৃত মোট সোনার প্রায় অর্ধেকই গয়নায় ব্যবহার হয়। ভারত ও চীন সবচেয়ে বড় ভোক্তা। বিয়ের মৌসুম ও উৎসবের সময় সোনার চাহিদা আরও বেড়ে যায়।
এ ছাড়া বিনিয়োগকারীরা সোনার বার, মুদ্রা ও বন্ডে অর্থ লগ্নি করেন। অনিশ্চিত সময়ে এসব বিনিয়োগ বাড়তে দেখা যায়। একইসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোও তাদের মজুত বাড়িয়ে থাকে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা
বিশ্ববাজারে সোনার দামের পেছনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর এই প্রবণতা আরও বেড়েছে। ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের এক জরিপে জানা গেছে, ৪৩ শতাংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগামীতে সোনা মজুত বাড়াতে চায়। যুক্তরাষ্ট্র ডলারকে ভূরাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করায় অনেক দেশ ডলারের বিকল্প হিসেবে সোনার দিকে ঝুঁকছে।
অন্যদিকে, বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টি এখন যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজার সংক্রান্ত নতুন পরিসংখ্যানের দিকে, যা ফেডের ভবিষ্যৎ সুদহার নীতির ওপর প্রভাব ফেলবে।
রুপার বাজারে অবশ্য তেমন পরিবর্তন হয়নি। গতকাল আউন্সপ্রতি রুপার দাম ছিল ৪০ দশমিক ৬৪ ডলার, যদিও সম্প্রতি এটি সেপ্টেম্বর ২০১১–এর পর সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছিল।