নিহত রূপলালের কিশোর ছেলে সংসার চালাতে জুতা সেলাই করছেন

মোট দেখেছে : 101
প্রসারিত করো ছোট করা পরবর্তীতে পড়ুন ছাপা

রংপুরের তারাগঞ্জ বাজারের ফুটপাতে বসে কিশোর জয় রবিদাস। বয়স মাত্র ১৪ বছর। হাতে থাকার কথা বই–খাতা, বন্ধুদের সঙ্গে ক্লাস করার কথা। কিন্তু বাবাকে গণপিটুনিতে হারানোর পর সংসার চালাতে বাধ্য হয়ে আজ সে বসেছে কাঠের চৌকিতে—হাতে সুই-সুতা, সামনে ফাটা জুতা।

গত ৯ আগস্ট রাতে ভ্যানচোর সন্দেহে স্থানীয়রা রূপলাল রবিদাসকে (৪৮) ধরে পিটিয়ে হত্যা করে। অথচ তিনি কোনো চোর ছিলেন না। বাড়ি ফেরার পথে অন্য এক স্বজনের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝির জেরে নির্দোষ মানুষটিকে গণপিটুনিতে হত্যা করা হয়। এক মূহূর্তের উন্মত্ততায় যারা নিরপরাধ একজন মানুষকে পিটিয়ে মেরেছে, তারা শুধু একজন পিতা নয়—একটি পরিবারকেও ধ্বংস করেছে।

রূপলালের মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছে তার পরিবার। ভ্যানচালক ও জুতা সেলাইয়ের কাজ করে যিনি পরিবার চালাতেন, আজ তার ছোট ছেলে জয় বই ছেড়ে জুতা সেলাই করছে। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করে কোনো মতে ৩০০ টাকা রোজগার হয়। সেই টাকায় চলছে মা, দুই বোন আর দাদিসহ পাঁচজনের সংসার।

জয় বলছে, “বাবা আমাকে শিক্ষক বানাতে চাইত। কিন্তু এখন আমি জুতা সেলাই করি। খুব কষ্ট হয়, কিন্তু উপায় নেই। পড়াশোনা হবে কি না জানি না, তবে দুই বোনকে পড়াতে চাই।”

তারাগঞ্জ সরকারি মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “যদি রূপলালকে এভাবে গণপিটুনিতে হত্যা না করা হতো, তাহলে জয় আজও ক্লাসে পড়ত। এই নৃশংসতা শুধু একটি জীবন নয়, একটি শিশুর ভবিষ্যতও ধ্বংস করেছে।”

স্থানীয়রা বলছেন, রূপলাল ছিলেন শান্ত, বিনয়ী মানুষ। কাউকে কখনো কষ্ট দেননি। অথচ সামান্য সন্দেহে তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হলো। এখন তার ছেলে ফুটপাতে বসে বাবার জায়গা দখল করেছে—বই ছেড়ে হাতে নিয়েছে সুই-সুতা।

উপজেলা প্রশাসন পরিবারকে কিছু আর্থিক সহায়তা দিয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায়—গণপিটুনির নামে এই বর্বরতা কবে বন্ধ হবে? আর কত নির্দোষ মানুষকে এভাবে প্রাণ দিতে হবে?