আজ মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলো দুর্গাপূজা

মোট দেখেছে : 245
প্রসারিত করো ছোট করা পরবর্তীতে পড়ুন ছাপা

শারদীয় দুর্গাপূজা ২০২৫ আজ রোববার ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে। হিন্দু সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে দুর্গাপূজা শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি এখন সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক মিলনমেলার উৎসব হিসেবেও পরিচিত। দেবী দুর্গা স্বর্গলোক কৈলাস থেকে কন্যারূপে বাপের বাড়ি মর্ত্যে এসেছেন। এ বছর দেবীর আগমন ঘটছে গজে বা হাতিতে চড়ে, আর বিসর্জনের দিন দেবী বিদায় নেবেন দোলায় বা পালকিতে চড়ে।

আজ সকাল ৯টা ৫৮ মিনিটের আগে অনুষ্ঠিত হয়েছে দুর্গাদেবীর ষষ্ঠ্যাদি কল্পারম্ভ ও ষষ্ঠীবিহিত পূজা। সন্ধ্যায় হবে দুর্গাদেবীর আমন্ত্রণ এবং অধিবাস। এরপর সোমবার মহাসপ্তমী, মঙ্গলবার মহাষ্টমী, বুধবার মহানবমী এবং বৃহস্পতিবার বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে। পূজা উপলক্ষে দেশের প্রতিটি মণ্ডপে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে।

হিন্দু পুরাণে উল্লেখ আছে, অসুরশক্তির কাছে পরাজিত হয়ে দেবতারা একসময় স্বর্গ থেকে বিতাড়িত হয়েছিলেন। তখন অশুভ শক্তির বিনাশ করতে দেবতারা একত্রিত হয়ে নিজেদের শক্তি থেকে এক মহাশক্তির সৃষ্টি করেন। সেই মহাশক্তি হলেন দেবী দুর্গা। তিনি মহিষাসুরের সঙ্গে যুদ্ধে বিজয় লাভ করেন এবং অসুর বিনাশ করে দেবতাদের স্বর্গে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। এই কাহিনির ভিত্তিতেই প্রতিবছর শরৎকালে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়।

শারদীয় দুর্গাপূজার পুণ্যলগ্ন মহালয়া পালিত হয়েছে ২১ সেপ্টেম্বর। সেই দিন থেকেই দেবীপক্ষ শুরু হয়। আজ ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে পূজার আনুষ্ঠানিক সূচনা হলো। আগামী কয়েকদিন ভক্তরা উপাসনা, প্রার্থনা ও পূজা অর্চনার মাধ্যমে দেবী দুর্গাকে আহ্বান জানাবেন। পূজার প্রতিটি দিনে ভিন্ন ভিন্ন আচার ও অনুষ্ঠান পালিত হবে। সপ্তমীতে নবপত্রিকা প্রবেশ ও পূজা, অষ্টমীতে কুমারী পূজা ও সন্ধিপূজা, নবমীতে হোমযজ্ঞ এবং দশমীতে দেবীর বিসর্জন অনুষ্ঠিত হবে।

বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ এবং মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ বছর সারাদেশে মোট ৩৩ হাজার ৩৫৫টি মণ্ডপ ও মন্দিরে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৩১ হাজার ৪৬১টি। অর্থাৎ, এ বছর গত বছরের তুলনায় ১ হাজার ৮৯৪টি পূজা বেশি হচ্ছে। শুধু ঢাকা মহানগরেই পূজা হচ্ছে ২৫৯টি মণ্ডপে, যা গত বছরের তুলনায় ৭টি বেশি। পূজার সংখ্যা বৃদ্ধির মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে, সামাজিক ও ধর্মীয়ভাবে দুর্গাপূজার ব্যাপকতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এই উৎসব সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য যেমন আনন্দের, তেমনি সার্বজনীন সাংস্কৃতিক বন্ধনকে আরও মজবুত করছে।

দুর্গাপূজা উপলক্ষে রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে দেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও গ্রামীণ এলাকায় আলোকসজ্জা, প্রতিমা নির্মাণ এবং প্যান্ডেল সাজসজ্জার কাজ শেষ হয়েছে। প্রতিটি মণ্ডপে ভক্তদের নিরাপদ পরিবেশে পূজা করার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগরীতে প্রতিটি মণ্ডপে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে এবং মণ্ডপ এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। গ্রামীণ মণ্ডপগুলোতেও স্থানীয় প্রশাসন ও পূজা উদ্‌যাপন কমিটির পক্ষ থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।

শারদীয় দুর্গাপূজা শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য নয়, এটি এখন বাংলাদেশের সামগ্রিক সংস্কৃতির অংশ হয়ে উঠেছে। পূজামণ্ডপে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে হাজারো মানুষ ভিড় জমায়। প্রতিমা দর্শন, আলোকসজ্জা দেখা এবং মেলায় অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে সারা দেশে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে। বিজয়া দশমীর দিন প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে এই উৎসব শেষ হলেও এর আনন্দ ও উচ্ছ্বাস মানুষের মনে দীর্ঘদিন থেকে যায়।