বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবসগুলো যথাযথ মর্যাদায় উদ্যাপন ও পালনের জন্য নতুন করে একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করেছে। সম্প্রতি জারি করা এই প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী দেশের সকল মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে দিবস উদ্যাপনে নির্দিষ্ট নীতিমালা অনুসরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে তিন ধাপে দিবসগুলো ভাগ করা হয়েছে — জাতীয় পর্যায়ে উদ্যাপিত দিবস, উল্লেখযোগ্য কলেবরে পালিত দিবস এবং সীমিত কলেবরে পালিত দিবস।
সরকারি দিবস উদযাপনে নতুন নিয়ম কার্যকর, বাতিল পুরোনো পরিপত্র
প্রথম ধাপে জাতীয় পর্যায়ে পালিত হবে ১৬টি দিবস। এগুলো হলো —
২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ১ মার্চ জাতীয় বিমা দিবস, ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস, ১ মে মে দিবস, মে মাসে বৌদ্ধ পূর্ণিমা, ৫ আগস্ট জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস, ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস, ২৫ ডিসেম্বর বড়দিন, ১ বৈশাখ বাংলা নববর্ষ, ২৫ বৈশাখ রবীন্দ্রজয়ন্তী, ১১ জ্যৈষ্ঠ নজরুলজয়ন্তী, ১ শাওয়াল ঈদুল ফিতর, ১০ জিলহজ ঈদুল আজহা, ১২ রবিউল আউয়াল ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) এবং দুর্গাপূজা (পঞ্জিকা অনুযায়ী)।
দ্বিতীয় ধাপে রয়েছে যেসব দিবস উল্লেখযোগ্য কলেবরে পালিত হবে, যেমন— ২ জানুয়ারি জাতীয় সমাজসেবা দিবস, ৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস, ২৫ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সরকার দিবস, ২ মার্চ জাতীয় ভোটার দিবস, ৬ মার্চ জাতীয় পাট দিবস, ২৩ মার্চ বিশ্ব আবহাওয়া দিবস, ৩ এপ্রিল জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস, ৬ এপ্রিল জাতীয় ক্রীড়া দিবস, ৭ এপ্রিল বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস, ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর দিবস, ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস, ২৬ জুন মাদকবিরোধী দিবস, ১১ জুলাই বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস, ১২ আগস্ট জাতীয় যুব দিবস, ৮ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস, ২৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ব পর্যটন দিবস, ৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবস, ১৬ অক্টোবর বিশ্ব খাদ্য দিবস, ২২ অক্টোবর জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস, ১ ডিসেম্বর বিশ্ব এইডস দিবস, ৩ ডিসেম্বর প্রতিবন্ধী দিবস, ৯ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস, এবং ১৮ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস।
তৃতীয় ধাপে রয়েছে সীমিত কলেবরে পালিত দিবস, যেখানে নির্দিষ্ট খাতভিত্তিক ও প্রতীকী দিবস অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো — ৪ ফেব্রুয়ারি জাতীয় ক্যানসার দিবস, ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী অধিকার দিবস, ২২ মার্চ বিশ্ব পানি দিবস, ২৪ মার্চ বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস, ২ এপ্রিল অটিজম সচেতনতা দিবস, ৩ মে বিশ্ব প্রেস ফ্রিডম দিবস, ১৫ মে বিশ্ব টেলিযোগাযোগ দিবস, ৩১ মে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস, ৯ জুন বিশ্ব খরা ও মরুকরণ প্রতিরোধ দিবস, ১৬ সেপ্টেম্বর ওজোন সংরক্ষণ দিবস, ১০ অক্টোবর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস, ১৪ নভেম্বর বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস এবং ১০ ডিসেম্বর বিশ্ব মানবাধিকার দিবস।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, এসব দিবস উদ্যাপনের ক্ষেত্রে সরকারি ব্যয় সাশ্রয়ের লক্ষ্যে বড় ধরনের শোভাযাত্রা বা সাজসজ্জা না করে রেডিও, টেলিভিশন ও গণমাধ্যমে আলোচনাসভা, সেমিনার বা সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান আয়োজনের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। দিবস উদ্যাপন যেন অফিস কার্যক্রমে ব্যাঘাত সৃষ্টি না করে, সে দিকেও লক্ষ্য রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সরকারি অর্থায়নে অনুষ্ঠান আয়োজনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত বরাদ্দের সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া রাজধানীর বাইরে থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারী আনার প্রয়োজন না হলে তা পরিহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয়গুলোকে একই ধরণের দিবস একত্রে পালন করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে, যাতে সময় ও সম্পদ দুই-ই সাশ্রয় হয়।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, পূর্বের ২০২৪ সালের ২১ অক্টোবর তারিখের পরিপত্রটি বাতিল করা হয়েছে। নতুন নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর হবে এবং জনস্বার্থে জারি করা এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশজুড়ে দিবস উদ্যাপনে একক কাঠামো তৈরি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
English