রংপুরের পীরগাছা উপজেলার তালুক ইসাত গ্রামের আবদুর রাজ্জাক ছিলেন একজন ভ্যানচালক। সংসারের একমাত্র সম্বল ছিল তাঁর চালানো ভ্যান আর একটি বিদেশি জাতের গরু। গরুটির যত্ন নিতেন স্ত্রী ফেনসী আক্তার। অভাবের মধ্যেও দু’জন মিলে কোনোমতে সংসার চালাচ্ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ এক ভয়াবহ ঘটনায় সব শেষ হয়ে গেল।
অ্যানথ্রাক্সে ভ্যানচালক রাজ্জাকের মৃত্যু, নিঃস্ব স্ত্রী ফেনসীর সংগ্রাম





গত ২০ জুলাই গ্রামের এক আত্মীয়ের অসুস্থ গরু জবাই করতে সাহায্য করতে যান রাজ্জাক। গরুর মাংস কাটার সময় তাঁর আঙুলে সামান্য কেটে যায়। এর কিছু সময় পর থেকেই শরীর খারাপ হতে শুরু করে। প্রথমে পল্লিচিকিৎসকের পরামর্শ নিলেও কোনো উন্নতি হয়নি। পরে তাঁকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, কিন্তু অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে বেসরকারি এক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।
চিকিৎসকেরা ধারণা করছেন, রাজ্জাক অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। যদিও হাসপাতালের রিপোর্টে তাঁকে “হার্ট অ্যাটাক” রোগী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, আইইডিসিআর জানায়—তাঁর দেহে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ ছিল।
রাজ্জাকের মৃত্যুর চার দিন পর তাঁর প্রিয় গরুটিও মারা যায়। এতে সম্পূর্ণ ভরসা হারান স্ত্রী ফেনসী আক্তার। স্বামী মারা যাওয়ার পর তিনি সাত বছরের ছেলেকে নিয়ে একা হয়ে পড়েছেন। সংসারে রোজগারের কোনো উৎস নেই। স্বামীর ভ্যানটি বিক্রি করে দেন দেনা শোধ করতে। এখন চাল, খাবার—সবই শেষ।
ফেনসী আক্তার বলেন, “স্বামী ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাতেন। এখন কিছুই নেই। আল্লাহই জানেন, আমার ছেলেকে নিয়ে কীভাবে চলব।”
এদিকে একই সময় পীরগাছা ও আশপাশের ইউনিয়নগুলোতে অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। আইইডিসিআরের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় অন্তত ১১ জনের শরীরে অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গবাদিপশু জবাই ও মাংস প্রক্রিয়াজাত করার সময় সতর্কতা না মানায় সংক্রমণ দ্রুত ছড়াচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, এখনো অনেক এলাকায় নির্দিষ্ট কসাইখানা নেই, ফলে ঘরের পাশেই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পশু জবাই করা হয়। এতে সংক্রমণের ঝুঁকি আরও বাড়ছে।
একজন হতভাগী নারী—ফেনসী আক্তার—এখন শুধু আশা করছেন, কেউ যেন তাঁর ছেলেকে স্কুলে পাঠাতে সাহায্য করে, আর তাঁর জীবনের এই অন্ধকারে একটু আলো জ্বলে ওঠে।