চট্টগ্রামে চিকিৎসকের ছেলেকে অপহরণের চেষ্টা: দুই কিশোর গ্যাং গ্রেপ্তার

মোট দেখেছে : 7
প্রসারিত করো ছোট করা পরবর্তীতে পড়ুন ছাপা

চট্টগ্রামে চিকিৎসকের ও-লেভেলপড়ুয়া ছেলেকে অপহরণের পরিকল্পনা করে দুটি কিশোর গ্যাং। মুক্তিপণের টাকা আদায়ের জন্য ‘ডট গ্যাং’ নামের গ্যাংয়ের নেতা আবদুল্লাহ আল মাসুম (১৯) অন্য একটি গ্যাং ‘নাজিরপাড়া সিন্ডিকেট’ (এনএস)–কে ভাড়া করে অপহরণের কাজ করায়। অপহরণের জন্য ছয় হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়, যার মধ্যে আগাম চার হাজার টাকা পরিশোধও করা হয়েছিল।

অপহরণের ঘটনাটি ঘটে ২২ সেপ্টেম্বর। পরিকল্পনা অনুযায়ী, কোচিংয়ে যাওয়ার পথে কিশোর গ্যাং এনএস ওই শিক্ষার্থীকে ধারালো অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে মুরাদপুর রেললাইন এলাকায় নিয়ে যায়। সেখানে মারধর করলে শিক্ষার্থী চিৎকার শুরু করে। স্থানীয়দের সহায়তায় সে কৌশলে পালিয়ে বাসায় ফিরে আসে। ঘটনার পর থেকে সে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, এনএস গ্যাংয়ের সদস্যরা সবাই অষ্টম থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। গত শুক্রবার রাতে মুরাদপুর এলাকা থেকে এই গ্যাংয়ের আট সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে তিনটি ছুরি, চাপাতি, লোহার রড ও পাইপ উদ্ধার করা হয়েছে। এদের মধ্যে এনএস গ্যাংয়ের নেতা মাহিন (২২) ছিনতাই, অপহরণসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত।

পাঁচলাইশ থানার উপপরিদর্শক নয়ন আহমেদ বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থলে কয়েক মিনিট দেরিতে গেলে উভয় গ্যাংয়ের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হতো। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ সোলাইমান বলেন, গ্রেপ্তার কিশোরদের বেশিরভাগই নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের। তাদের মধ্যে ছয়জন দীর্ঘদিন ধরে পরিবারের অবাধ্য। কলেজপড়ুয়া মাসুম মাদকাসক্ত এবং নেশার টাকার জন্যই চিকিৎসকের ছেলেকে অপহরণের পরিকল্পনা করেছিল।

অপহরণের ঘটনার পর থেকে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ট্রমায় রয়েছে। তার পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো মামলা করা হয়নি। শিশুটির বাবা বলেন, “আমার ছেলে এখনো কাঁদছে, ও কীভাবে স্কুলে যাবে বুঝতে পারছি না।”

চট্টগ্রামে বর্তমানে প্রায় ২০০টি কিশোর গ্যাং সক্রিয় রয়েছে। এসব গ্যাংয়ে প্রায় ১ হাজার ৪০০ জন কিশোর জড়িত। নগর পুলিশের এক জরিপে দেখা গেছে, শহরের স্কুলে অনুপস্থিত থাকা ৫৪ শতাংশ শিক্ষার্থী কোনো না কোনো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। তারা ছিনতাই, মাদক, সাইবার অপরাধ, অনলাইন জুয়া ও মারামারিতে জড়িত হচ্ছে। এসব গ্যাংয়ের নামের মধ্যে রয়েছে এমবিএস, কেবি, এনএস, ৯৯৯, এক্স-মার্ক, ব্যাকহোল, ডট গ্যাং ইত্যাদি।

নগর পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ বলেন, কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত অভিযান চলছে। যেসব প্রভাবশালী ব্যক্তি এসব গ্যাংকে আশ্রয় দেয়, তারাও ছাড় পাচ্ছে না। অভিভাবকদেরও সচেতন হতে হবে, সন্তান কোথায় যায় ও কী করছে—সেটির খোঁজ রাখা এখন অত্যন্ত জরুরি।