কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই এখন প্রযুক্তির পাশাপাশি চাকরির দুনিয়ায়ও বড় পরিবর্তন আনছে। যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে, গত তিন বছরে এআই প্রযুক্তির কারণে তরুণ কর্মীদের চাকরির সুযোগ উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।
প্রযুক্তির অগ্রগতি না অভিশাপ? এআইয়ের কারণে বেকার হচ্ছে নতুন প্রজন্ম
গবেষণায় দেখা গেছে, ২২ থেকে ২৫ বছর বয়সী কর্মীদের মধ্যে কর্মসংস্থান সবচেয়ে বেশি হ্রাস পেয়েছে সফটওয়্যার উন্নয়ন ও কাস্টমার সার্ভিস খাতে। আগে যেখানে নতুন কর্মীদের হাতে-কলমে অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ ছিল, এখন সেই জায়গা দখল করে নিচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চালিত টুল ও সফটওয়্যার।
গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন স্ট্যানফোর্ডের গবেষক এরিক ব্রিনজলফসন, ভারত চন্দর ও রুইউ চেন। তাঁদের মতে, এআই–নির্ভর কাজের প্রসারের পর এই বয়সী তরুণদের চাকরির হার প্রায় ১৩ শতাংশ কমেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জেনারেটিভ এআই আসার পর থেকে অনেক কোম্পানি মানবসম্পদের পরিবর্তে প্রযুক্তিনির্ভর সমাধানে ঝুঁকছে। বিশেষ করে ২০২২ সালের শেষ দিক থেকে ChatGPT জনপ্রিয় হওয়ার পর কর্মসংস্থানে বড় পরিবর্তন এসেছে।
ফোর্ড মোটর কোম্পানির প্রধান নির্বাহী জিম ফার্লি সতর্ক করে বলেন, ভবিষ্যতে অফিসভিত্তিক অনেক কাজই এআই দ্বারা সম্পন্ন হবে, যার ফলে “সাদা-পোশাকের প্রায় অর্ধেক চাকরি” ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে।
রাইকের চিফ প্রোডাক্ট অফিসার অ্যালেক্সি কোরোটিচ বলেন, “প্রবেশ পর্যায়ের চাকরিগুলিই ভবিষ্যতের নেতৃত্ব তৈরি করে। কিন্তু যদি এই ধাপটাই হারিয়ে যায়, তাহলে কোম্পানিগুলো ভবিষ্যতের নেতৃত্ব হারানোর ঝুঁকিতে পড়বে।”
বর্তমানে সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টে গিটহাব কোপাইলট, কোডজিপিটি, রেপলিট, অ্যামাজন কিউ ডেভেলপারসহ অসংখ্য এআই টুল ব্যবহৃত হচ্ছে। অন্যদিকে কাস্টমার সার্ভিসেও প্রায় ১ হাজার ৮০০ এআই টুল এখন সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব প্রযুক্তি উৎপাদনশীলতা বাড়ালেও তরুণদের হাতে-কলমে শেখার সুযোগ কমিয়ে দিচ্ছে, যা ভবিষ্যতের কর্মজীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট
বাংলাদেশেও আইটি, ডিজিটাল মার্কেটিং ও কনটেন্ট ক্রিয়েশনের মতো খাতে দ্রুত এআইয়ের ব্যবহার বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এখন থেকেই তরুণদের নতুন দক্ষতা অর্জনে মনোযোগ দিতে হবে। শুধুমাত্র প্রযুক্তিগত জ্ঞান নয়—সৃজনশীলতা, বিশ্লেষণী ক্ষমতা ও মানবিক বোধই ভবিষ্যতের চাকরির মূল প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র হবে।
English