চট্টগ্রাম জেলার শতাধিক কৃষক কয়েক বছর ধরে আলু চাষ করে লাভের মুখ দেখেননি। ফলে তাঁরা ধীরে ধীরে আলু চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।
চট্টগ্রামে আলু চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষক | উৎপাদন কমেছে ২৮%, বাড়ছে লোকসান
চট্টগ্রামে আলু চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষকেরা
চট্টগ্রামের অনেক কৃষক এখন আর আগের মতো আলু চাষে আগ্রহী নন। কয়েক বছর ধরে পরপর লোকসান গুনতে হওয়ায় তাঁরা ধীরে ধীরে এই ফসলের চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। চন্দনাইশ উপজেলার কৃষক মো. উসমান গণী জানিয়েছেন, গত মৌসুমে প্রায় ৩০ শতক জমিতে আলু রোপণ করলেও লাভের মুখ দেখেননি। রোগবালাই আর পোকার আক্রমণে ফসলের অনেকটাই নষ্ট হওয়ায় খরচও তুলতে পারেননি। এবার তাই তিনি জমির পরিমাণ কমিয়ে মাত্র কয়েক গন্ডায় আলু চাষের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
ফলন কমে যাচ্ছে, খরচ বাড়ছে
স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, একসময় আলু ছিল লাভজনক ফসল, কিন্তু এখন ফলন কমে যাওয়া, পচন, এবং বাজারদর কমে যাওয়ায় তা লোকসানের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, দেশে বিগত মৌসুমে আলুর উৎপাদন চাহিদার তুলনায় প্রায় ৪০ লাখ টন বেশি হয়েছিল, যার ফলে দাম পড়ে যায়। মাঠ পর্যায়ে কৃষকেরা ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় অনেকে এখন আর আলু চাষে ঝুঁকছেন না। এ ছাড়া ভাইরাস, লেট ব্লাইট, আর্লি ব্লাইট, লিফ কার্ল প্রভৃতি রোগ ও পোকামাকড়ের কারণে স্থানীয় জাতের আলু ক্রমেই নষ্ট হচ্ছে।
চাষ কমেছে প্রায় ২১ শতাংশ, উৎপাদন হ্রাস ২৮ শতাংশ
গত পাঁচ বছরে চট্টগ্রামে আলু আবাদ ও উৎপাদন উভয়ই কমেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৪,৬৪১ হেক্টর জমিতে ৬৪,৬৮৫ টন আলু উৎপাদন হলেও ২০২৪-২৫ সালে তা নেমে এসেছে ৩,৬৮৩ হেক্টর জমি ও ৪৬,৪৯৯ টনে। অর্থাৎ, জমি কমেছে প্রায় ২১ শতাংশ এবং উৎপাদন ২৮ শতাংশ। কর্মকর্তাদের মতে, একই জাতের বীজ বারবার ব্যবহার, অপরিপক্ব বীজ, এবং সার-বীজ ব্যবস্থাপনার ঘাটতির কারণে ফলন কমছে। কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বীজের মান উন্নত করা, এক বছর বিরতি দিয়ে চাষ করা, এবং বৈচিত্র্যময় ফসল ব্যবস্থাপনায় নজর দিতে—যাতে ভবিষ্যতে ক্ষতির মুখে না পড়েন।
English