বাম দলগুলোর দাবি: চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে

মোট দেখেছে : 342
প্রসারিত করো ছোট করা পরবর্তীতে পড়ুন ছাপা

রাজধানী ঢাকায় এক বামপন্থী রাজনৈতিক সমাবেশে বক্তারা অভিযোগ করেছেন যে, অন্তর্বর্তী সরকার দেশের গুরুত্বপূর্ণ দুটি বন্দর — চট্টগ্রামের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল এবং মোংলা বন্দর কন্টেইনার টার্মিনাল — বিদেশি কোম্পানির কাছে ইজারা দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে। তারা দাবি করেন, ডিসেম্বরের মধ্যেই সরকারের সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ডিপি ওয়ার্ল্ড (DP World)–এর চুক্তি সম্পাদনের চেষ্টা চলছে। বক্তারা বলেন, এই প্রতিষ্ঠানের অতীত রেকর্ড নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নানা বিতর্ক রয়েছে।

সোমবার দুপুরে পল্টন সংলগ্ন জিপিও মোড়ে অনুষ্ঠিত এই বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নেন বাম গণতান্ত্রিক জোটফ্যাসিবাদ বিরোধী বাম মোর্চা–এর নেতারা। তারা দাবি করেন, বিদেশি কোম্পানির হাতে বন্দর ব্যবস্থাপনা চলে গেলে দেশীয় শ্রমিকদের ব্যাপক ছাঁটাই হবে এবং দেশের অর্থনৈতিক সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে। বক্তারা অভিযোগ করেন, সরকার আগেই বন্দরের শুল্ক ৪১ শতাংশ বাড়িয়ে দিয়েছে যাতে পরবর্তীতে ছাঁটাই বা অর্থনৈতিক প্রভাবের দায় বিদেশি প্রতিষ্ঠানের ওপর না পড়ে।

সমাবেশে বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, আফ্রিকার জিবুতি দেশটি একসময় ডিপি ওয়ার্ল্ডের কাছে তাদের বন্দর ইজারা দিয়েছিল, কিন্তু পরে ক্ষতির মুখে পড়ে সেই চুক্তি বাতিল করতে বাধ্য হয়। তবুও তারা এখনও ঋণমুক্ত হতে পারেনি। তিনি অভিযোগ করেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার মার্কিন স্বার্থ রক্ষার জন্য দেশের বন্দর বিদেশি হাতে তুলে দিতে চায়। তার ভাষায়, “শেখ হাসিনার সরকার যেমন ভারতের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করেছিল, বর্তমান সরকারও তেমনি মার্কিন স্বার্থে দেশের সম্পদ ইজারা দেওয়ার চক্রান্ত করছে।”

বজলুর রশীদ আরও বলেন, “এখনো সময় আছে, সরকার যদি এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসে, তাহলে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। প্রয়োজনে নতুন গণঅভ্যুত্থানের ডাক দেওয়া হবে।” তিনি ঘোষণা দেন, আগামী ৮ নভেম্বর চট্টগ্রামে বৃহত্তর সমাবেশ করা হবে এবং নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ঘেরাওয়ের কর্মসূচি পালন করা হবে। প্রয়োজনে হরতাল ও অবরোধসহ কঠোর আন্দোলন শুরু করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

সমাবেশে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন বলেন, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোনো আপস করা হবে না। তিনি বলেন, “যতদিন বামপন্থী শক্তি সক্রিয় আছে, দেশের সম্পদ বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়া সম্ভব নয়।”

গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু বলেন, “ডিপি ওয়ার্ল্ড যে দেশগুলোর বন্দর পরিচালনা করেছে, সেখানকার অনেক জায়গায় তাদের কার্যক্রম নিয়ে বিতর্ক ও অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। যদি বাংলাদেশেও এই চুক্তি হয়, তা দেশের স্বাধীনতা ও অর্থনীতির জন্য বিপদজনক হবে।”

এ ছাড়া ফ্যাসিবাদ বিরোধী বাম মোর্চার সমন্বয়ক নাসির উদ্দিন আহম্মদ, সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আবদুল আলী, সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক হারুনার রশিদ ভূঁইয়া, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, সিপিবি নেতা আব্দুল্লাহ ক্বাফী রতনরুহিন হোসেন প্রিন্সসহ আরও অনেকে বক্তব্য দেন।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত প্রাথমিক সমাবেশে বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলনের সমন্বয়ক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী বলেন, “বঙ্গোপসাগর এখন আন্তর্জাতিক সামরিক শক্তিগুলোর প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র হয়ে উঠছে, এবং বর্তমান সরকার মার্কিন প্রভাব বিস্তারের পথ তৈরি করছে।” তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান, এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে এবং দেশের বন্দর ব্যবস্থাপনা সম্পূর্ণভাবে জাতীয় নিয়ন্ত্রণে রাখতে।

বাসদ (মার্ক্সবাদী) নেতা মাসুদ রানা বলেন, “চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে গেলে জাতীয় নিরাপত্তা ও কর্মসংস্থান উভয়ই ঝুঁকিতে পড়বে। সরকার উন্নয়নের যে গল্প শোনাচ্ছে তার বাস্তব ভিত্তি নেই।”

সমাবেশ শেষে উপস্থিত নেতারা ঐক্যবদ্ধভাবে ঘোষণা দেন যে, দেশের স্বার্থবিরোধী কোনো চুক্তি তারা মেনে নেবেন না, প্রয়োজনে আন্দোলনের মাধ্যমে তা প্রতিহত করা হবে।